চিনি কি সত্যিই ডায়াবেটিসের কারণ? জানুন চিকিৎসকদের মত ও সতর্কতার লক্ষণ

সকালের শুরুতে এক কাপ চা না হলে যেন দিনই শুরু হয় না! আবার বিকেলে আড্ডা হোক কিংবা অফিসে কাজের ফাঁকে—চা বা কফিতে এক চামচ চিনি যেন অপরিহার্য। শুধু পানীয় নয়, মিষ্টান্ন, ডেজার্ট কিংবা রোজকার রান্নাতেও চিনির ব্যবহার অনিবার্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই নিত্য ব্যবহার করা চিনি কি আমাদের ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

চিনি ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে ভয় ও ভুল ধারণা। কেউ বলেন “চিনি খাও, ডায়াবেটিস হবে”, আবার কেউ বলেন “সব মিষ্টি বাদ দাও”। কিন্তু আসলে সত্যিটা কী?

চিনি ও ডায়াবেটিস: সরাসরি না পরোক্ষ সম্পর্ক?

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চিনি বেশি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। তবে মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে তা ওজন বৃদ্ধি করতে পারে, যা আবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন:

“চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস শরীরে চর্বি জমিয়ে ওজন বাড়ায়। ওজন বেশি হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ টুডে জানায়, চিনি সরাসরি ডায়াবেটিস না ঘটালেও এটি স্থূলতা, হৃদরোগ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে, যেখান থেকে ডায়াবেটিসের প্রবেশদ্বার খুলে যায়।

কোন লক্ষণগুলো দেখলে হতে হবে সতর্ক?

ডায়াবেটিস অনেক সময় নীরব ঘাতক হিসেবে শরীরে বাসা বাঁধে। তবে কিছু লক্ষণ আগে থেকেই সংকেত দেয়। নিচে এমন ১০টি সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হলো যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:

  1. ঘন ঘন প্রস্রাব ও অতিরিক্ত পিপাসা
  2. দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা
  3. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
  4. অনিয়মিত খাবারে রক্তে শর্করা কমে যাওয়া
  5. মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
  6. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  7. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া বা না শুকানো
  8. ত্বক শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি অনুভব হওয়া
  9. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
  10. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া

তাহলে কি চিনি একেবারেই বাদ দিতে হবে?

না, একেবারে বাদ দিতে হবে এমন নয়। কিন্তু পরিমিত এবং সচেতনতা সহকারে চিনি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। চিকিৎসকরা বলেন,

  • প্রাকৃতিক চিনি (যেমন ফলের চিনি)-কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
  • প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে অতিরিক্ত চিনি আসে, যা কমিয়ে আনতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চিনি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়:

  • নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • চিনি ও চর্বিজাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রিত রাখা
  • নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা
  • পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা

চিনি একা ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী নয়—বরং এটি একটি জটিল লাইফস্টাইল ও মেটাবলিক সমস্যা। তবে চিনির পরিমাণ ও উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

আপনার খাদ্যতালিকায় ছোট পরিবর্তন, এবং শরীর সম্পর্কে সচেতনতা—এই দুটি অভ্যাসই হতে পারে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।