নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “নতুন বাংলাদেশের জন্ম ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট নয়।”
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ দাবি করেন।
ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদ
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে লিখেছেন:
“নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট না। ৫ আগস্টের সাধারণ ছাত্র জনতার এই অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।”
তার এই বক্তব্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা ঘটে এবং সেটিই ছিল ‘নতুন বাংলাদেশের’ প্রকৃত ভিত্তি।
সরকারের সিদ্ধান্ত: ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৫ জুন) সরকার এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৮ আগস্ট-কে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। একই সঙ্গে, ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জাতীয় দিবস তালিকায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা দুটি পৃথক পরিপত্র অনুযায়ী—
- ৮ আগস্ট: ‘খ শ্রেণিভুক্ত’ দিবস হিসেবে নতুন বাংলাদেশ দিবস
- ৫ আগস্ট: ‘ক শ্রেণিভুক্ত’ দিবস হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থান দিবস
- ১৬ জুলাই: ‘খ শ্রেণিভুক্ত’ দিবস হিসেবে শহীদ আবু সাঈদ দিবস
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: কেন বিতর্ক?
৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটেছিল বলে দাবি করেন অনেকে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ওই দিন সাধারণ জনগণের চাপের মুখে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় এবং কিছু অংশের মতে, সেখান থেকেই ‘নতুন বাংলাদেশের’ যাত্রা শুরু।
কিন্তু সরকার ৮ আগস্টকে অন্তর্বর্তী সরকারের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করেছে। এনসিপি নেতার মতে, এই দিনটি রাজনৈতিকভাবে সরকারের পক্ষের ক্যালেন্ডার, যেখানে জনগণের আত্মত্যাগকে ছায়ায় রাখা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই কমেন্টে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সরকারের সিদ্ধান্তকে যুক্তিসংগত বলেও অভিমত দিয়েছেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন:
“৫ আগস্টেই ছাত্রদের রক্তে পথচলা শুরু হয়েছিল। ৮ আগস্ট তো শুধু কাগজে কলমে শপথ।”
অন্য একজন বলেন:
“সরকার যেটাই নির্ধারণ করুক, জনগণের কাছে ৫ আগস্টই থাকবে মূল ‘নতুন বাংলাদেশের’ দিন।”
সরকার কী বলছে?
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ৮ আগস্ট দিবসটি ‘খ শ্রেণিভুক্ত’ হিসেবে প্রতি বছর পালিত হবে এবং এটি অন্তর্বর্তী সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর স্মারক হিসেবে বিবেচিত হবে।