জাতীয় প্রতীক শাপলা কি রাজনীতির হাতিয়ার হতে যাচ্ছে? প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা

জাতীয় প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত শাপলা ফুল কি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে? এই প্রশ্ন এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য করে বলেন, “জাতীয় ফুল শাপলা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে না।”

সোমবার (২৩ জুন) সকালে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে ছাত্রদলের আয়োজিত সদস্য সংগ্রহ ফর্ম বিতরণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, “বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অন্যতম দৃশ্যমান অংশ হচ্ছে শাপলা। এটি জাতির ঐক্য, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রতীককে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে না। এটা জাতীয় অপমানের সামিল।”

নির্বাচন কমিশনে ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে আবেদন এনসিপির

নাছির উদ্দীন নাছিরের এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে একটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ। রবিবার (২২ জুন) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন উপস্থিত ছিলেন।

এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে: জাতীয় প্রতীককে রাজনৈতিক প্রতীক বানানো কি আদৌ সংবিধানসম্মত ও নৈতিক?

“জাতীয় প্রতীক নিরপেক্ষ হতে হয়”—ছাত্রদলের বার্তা

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “জাতীয় প্রতীক কখনোই দলীয় স্বার্থে ব্যবহারযোগ্য নয়। তা হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। একটি রাজনৈতিক দল যদি শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে সেটি জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করার ঝুঁকি তৈরি করবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আজকে যদি একটি দল শাপলা প্রতীক নেয়, কালকে হয়তো কেউ জাতীয় পাখি দোয়েল বা জাতীয় পতাকা সংক্রান্ত কোনো কিছু দাবি করতে পারে। তখন জাতীয় পরিচয়ের স্বকীয়তা কোথায় থাকবে?”

ছাত্রশিবিরের প্রসঙ্গ টেনে হুঁশিয়ারি

অনুষ্ঠানে নাছির ছাত্রশিবিরের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কথিত ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানার ব্যবহার করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সুযোগে তারা নিজেদের সংগঠনকে আড়ালে রেখে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আজ যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, তারা আগেও ক্যাম্পাসে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল। এখন নতুন রূপে সংগঠন গঠন করে নিজেদের পরিচয় আড়াল করছে। জনগণ এসব বুঝে গেছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত কোনো চিহ্নকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হলে তার ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। জাতীয় পরিচয়কে বিভক্ত করা মানে দেশের মূলে আঘাত হানা। এনসিপির ‘শাপলা’ প্রতীক চাওয়ার বিষয়টি আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশন পর্যালোচনা করলেও এর নৈতিক দিকটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় প্রতীককে সংবিধান ও আইনের বাইরে ব্যবহার করা হলে তা ভবিষ্যতে বড় সংকট ডেকে আনতে পারে। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে ব্যাপারটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা।”

এনসিপির পক্ষ থেকে কী বলা হচ্ছে?

এনসিপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে দলটির কয়েকজন নেতার দাবি, “শাপলা আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক, সেটিকে আমরা রাজনৈতিকভাবে মর্যাদা দিতে চাই। এতে জাতীয় ঐক্য ক্ষুণ্ন হওয়ার কিছু নেই বরং তা নতুন বার্তা দেবে।”

জাতীয় প্রতীক নিয়ে রাজনীতি—বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত?

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ দেশের স্বাধীনতা, ঐতিহ্য ও গৌরবের অংশ। এগুলোকে রাজনীতির ময়দানে টেনে আনা হলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে বাধ্য। ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আবেদন এবং ছাত্রদলের কড়া প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—“জাতীয় প্রতীক কি দলীয় প্রতীক হতে পারে?”

এই প্রশ্নের জবাব এখন নির্বাচন কমিশন ও দেশের বিবেকবান নাগরিকদের কাছেই।