দখলদার ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি, তার সহকারী হাসান মোহাকিক এবং আরও এক জ্যেষ্ঠ জেনারেল মোহসেন বাঘারি নিহত হয়েছেন। রোববার (১৫ জুন) রাজধানী তেহরানে চালানো এক নিশানা হামলায় তারা প্রাণ হারান। ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইল সরাসরি তেহরানের অভ্যন্তরে একটি গোপন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল আইআরজিসির শীর্ষ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। হামলায় মোহাম্মদ কাজেমি ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসান মোহাকিক হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। একই হামলায় আইআরজিসির জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা মোহসেন বাঘারিও নিহত হন।
ঘটনার পরপরই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হামলার দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমরা তেহরানে তাদের গোয়েন্দা প্রধান এবং তার সহকারীকে হত্যা করেছি।” এই বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আকস্মিকভাবে হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বিপ্লবী গার্ডের প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ছয় জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। একের পর এক এমন নিশানা হামলায় ইরানের সামরিক কাঠামো মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের এ ধরণের অভিযান শুধু ইরান-ইসরাইল সম্পর্ককেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইসরাইল ইরানের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করতে চাইছে, বিশেষত যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য মিত্ররা ইরানের সমর্থনে সক্রিয় হয়ে উঠছে।
ইরান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “ইরানের অভ্যন্তরে যদি কেউ হামলা চালায়, তবে তার জবাব দিতেই হবে।” বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এই ঘটনায় ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।