গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, বরিশালে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে নতুন করে ২৮৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬১ জনই বরিশাল বিভাগ থেকে, যা দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় ৯০ শতাংশ।

বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন ভর্তি হওয়া ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগের বাইরে থেকে ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, ঢাকা বিভাগে ১ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

অন্যদিকে, একই সময়ে ২৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩২ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১১ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।

মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম

সুখবর হচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) দেশে মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।

এর আগের বছর, ২০২৩ সালে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল আরও ভয়াবহ। ওই বছর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, আর মৃত্যু হয়েছিল রেকর্ড ১ হাজার ৭০৫ জনের।

বরিশালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা

সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয়ভাবে সচেতনতা ও কার্যকরী মশক নিধন কার্যক্রমের ঘাটতি, জমে থাকা পানি, এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে।

জনসচেতনতাই রক্ষার মূল হাতিয়ার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বারবার সতর্ক করছে যে, ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা এবং বাসা ও এর আশপাশ পরিষ্কার রাখা। জমে থাকা পানি, ফুলের টব, ড্রাম, ফ্রিজের নিচে বা এসির পানি নিষ্কাশনের জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ার, পর্যাপ্ত পানি পানের এবং প্রয়োজনে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এমন চিত্র স্বাস্থ্য খাতে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে এই রোগের ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে।