ঈদের উৎসব শেষ। প্রিয় জাতীয় দলের কাছ থেকে একটি জয় পেতে চেয়েছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা—উপহারের মতো কিছু যা আনন্দকে বাড়িয়ে দেবে আরও একধাপ। কিন্তু সেই প্রত্যাশায় হালকা ধাক্কা খেলো জাতীয় ফুটবল দল। ঈদের পর, এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচ শুরুর আগে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। প্রায় বিশ হাজার দর্শকের গলা ভরপুর প্রত্যাশায়। শুরুতে বল দখলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ, খেলায় আগ্রাসী মনোভাবও ছিল। হামজা, সামিত ও রাকিবরা বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে চাপে ফেলেন। কিন্তু গোলের সামনে গিয়ে ব্যর্থতা বড় হয়ে দাঁড়ায়।
৩২ মিনিটে প্রতিপক্ষের একটি দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে গোল হজম করে স্বাগতিক দল। প্রথমার্ধে গোল পরিশোধ না করতে পারায় ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেই ড্রেসিংরুমে ফিরে ক্যাবরেরার শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা রদবদলে ভরসা রাখেন। কাজেম শাহকে তুলে নামানো হয় শাহরিয়ার ইমনকে। ৪৮ মিনিটেই রাকিবের পাস থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান ইমন, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে গোলের দেখা মেলেনি। এরপর আরও একাধিক আক্রমণ এলেও তা কাজে আসেনি।
৫৮ মিনিটে সিঙ্গাপুর আবারও আঘাত হানে। তপু বর্মনের প্রথম ঠেকানো এবং মিতুল মারমার সেভ সত্ত্বেও বল পড়ে যায় ইখসান ফান্দির পায়ে। হৃদয় তাকে আটকাতে ব্যর্থ হলে তিনি নিচু শটে বল পাঠান বাংলাদেশের জালে, যা স্কোরলাইন করে ২-০।
এরপর ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ৬৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে হামজার নিখুঁত থ্রু পাস ধরে গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগে বল জালে জড়ান রাকিব হোসেন। এই গোলের পর আত্মবিশ্বাস ফেরে স্বাগতিক শিবিরে।
মাঠে নামানো হয় আরও আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়—মোরসালিন ও ফয়সাল ফাহিম। শাকিল ও হৃদয়কে তুলে নেওয়া হয়। এরপর একের পর এক কর্নার ও ফ্রি কিক পেলেও সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান মাহবুদ যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ৭৭ মিনিটে হামজার ফ্রিকিক, ইনজুরি টাইমে রাকিবের ফ্রি কিক থেকে হামজার শট কিংবা তারিক কাজীর হেড—সবই রক্ষা করেন মাহবুদ।
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধতা নেমে আসে স্টেডিয়ামে। ঈদের আনন্দের রেশ মিলিয়ে গিয়ে হতাশায় ডুবে যায় সমর্থকরা।
এই পরাজয়ে বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সামনে কঠিন পথ অপেক্ষা করছে। তবে দলের লড়াকু মনোভাব ও দর্শকদের উপস্থিতি প্রমাণ করে—এই হারই শেষ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য নতুন পথচলার শুরু।