মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় বহুল আলোচিত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত। একইসাথে মামলার ছয় আসামির যাবজ্জীবন সাজাও বহাল রাখা হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) বেলা ১১টায় বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মোহাম্মদ সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের নিষ্পত্তি করে এ চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ুন কবির মঞ্জু এবং শামীমা দিপ্তি। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহাজাহান।

কী হয়েছিল ২০২০ সালের সেই রাতে?

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি তখন একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজে কক্সবাজারে ছিলেন। ওই রাতে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তখনকার টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলী—এমন অভিযোগ উঠে।

ঘটনার পাঁচ দিন পর, ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে র‌্যাব। তদন্ত শেষে ১৩ ডিসেম্বর তারা ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে।

বিচারিক আদালতের রায়

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি সাতজনকে খালাস দেন আদালত। এরপর ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়, পাশাপাশি দণ্ডিত আসামিরা আপিল করেন।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

হাইকোর্ট বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন নিরপরাধ নাগরিকের মৃত্যু নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। রাষ্ট্রের আইন রক্ষাকারীদের দ্বারা এমন নিষ্ঠুরতা কোনোক্রমেই সহ্য করা যায় না।”

প্রতিক্রিয়া

সিনহার পরিবার ও আইনজীবীরা হাইকোর্টের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এ রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে বিচার ব্যবস্থার সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে এবং বলছে, এটি পুলিশি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শুরু থেকেই দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা ও জনমত তৈরি হয়। হাইকোর্টের এই রায় সেটি আরও একধাপ এগিয়ে নিলো—বিচার ও জবাবদিহির এক দৃঢ় বার্তা দিয়ে।