জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার রায় প্রকাশ, প্রতীক নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইসির ওপর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের আগের রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। রোববার (১ জুন) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে পাঠায়। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক দশক পর আবারও রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামি।

এর আগে, ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করলে দীর্ঘদিন পর রবিবার সকালে আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল করে দেন।

রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বৈধ এবং পূর্বের মতোই তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম চালাতে পারবে। তবে তাদের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। আদালতের মতে, প্রতীক বরাদ্দ করা ইসির প্রশাসনিক দায়িত্বের আওতাভুক্ত।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শিশির মনির রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে জানান, আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশ অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পুনর্বহাল হয়েছে। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বৈধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি দলটির নির্বাচনী প্রতীকও বহাল রয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ আছে।”

তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রতীক ইস্যুতেও বিবেচনা করবে।

এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জামায়াত নেতারা রায়কে “আইনের বিজয়” ও “গণতন্ত্রের অগ্রগতি” হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, ভিন্নমত পোষণকারীরা মনে করছেন, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত এ দলকে পুনরায় স্বীকৃতি দেওয়া রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নিয়ে। এরপর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারেনি। এবার যদি দলটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পায়, তবে তারা আবারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার এই রায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো কী প্রতিক্রিয়া জানায়।