রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় হাইকোর্টের পূর্বের রায় বাতিল করা হয়।
তবে দলটির পূর্বের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রায় ও আইনি প্রক্রিয়া
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনিরসহ একাধিক আইনজীবী। আদালতে জামায়াতের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এর আগে ১৪ মে আপিল বিভাগের শুনানি শেষে ১ জুন রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। ১২ মার্চ থেকে আপিল বিভাগের বেঞ্চে নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ জামায়াতের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করেন, যা দলটির পক্ষে আইনি লড়াইয়ের পথ খুলে দেয়।
পটভূমি ও পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট
২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রিট মামলার রায়ে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
জামায়াত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০২3 সালের নভেম্বরে মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগ “ডিসমিস ফর ডিফল্ট” বলে আপিল খারিজ করে দেয়। এতে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে পরে ২৮ আগস্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সরকার।
পরবর্তী করণীয়
বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী পুনরায় নিবন্ধন পেলে দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। তবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরিয়ে পাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ইসিকে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।