৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা চরমোনাই পীরের, নির্বাচনের আগে সংস্কার দাবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। মঙ্গলবার (২৭ মে) ঠাকুরগাঁও জেলার অপরাজেয় ৭১ মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই, তবে সংস্কার ছাড়া নয়। একটি দল শুধুই নির্বাচন নির্বাচন করছে, কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কোনো কথাই বলছে না। তারা বিদেশি সুরে কথা বলছে, জাতি জানে তারা ক্ষমতায় গেলে কী করবে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা খুনি, যারা টাকা পাচার করেছে—তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অতীতে খাবার না খেয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। তাই সরকারের উচিত শান্তিপূর্ণভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করা।”

চরমোনাই পীর অভিযোগ করেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (কারা এই পদে থাকবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি) পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। “আমরা তাকে বলেছি, আপনি দায়িত্বে থাকুন, আমরা সহযোগিতা করব,” বলেন তিনি।

জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। আমরা বারবার বলেছি, আগে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করতে হবে, তারপর নির্বাচন হতে পারে।”

চরমোনাই পীরের বক্তব্যে রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচনী নিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “দেশকে ভালোবাসি বলেই বলছি—এই দেশ রক্ত দিয়ে অর্জিত। এ দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলন রাজপথে থাকবে, ভোটের রাজনীতিতেও থাকবে।”

এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, এবং ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আমির মাওলানা মুহাম্মদ হাফিজ উদ্দীনসহ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্বাচন সংস্কার ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক চর্চার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা তাদের রাজনৈতিক প্রস্তুতির শক্ত বার্তা বহন করছে।

জনসভায় অংশগ্রহণকারী কর্মীরা জানান, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে দলের জনপ্রিয়তা তৃণমূল পর্যায়ে ক্রমেই বাড়ছে। আগামীতেও নির্বাচনের আগে দলটি বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের সভা ও প্রচার চালিয়ে যাবে বলে জানান নেতারা।