মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়ে মুক্ত হলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হয়েছেন। বুধবার (২৮ মে) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) আপিল বিভাগ আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যান্য দণ্ড বাতিল করে রায় দেন। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষণা করেন।

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি ঘটনায় আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০১৯ সালে আপিল বিভাগের তৎকালীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই রায় বহাল রাখে।

তবে সরকার পরিবর্তনের পর ২০২4 সালের আগস্টে দ্বিতীয়বারের মতো রিভিউ আবেদন করেন আজহারুল। দীর্ঘ শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট এবার তাকে খালাস দেন। বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে মঙ্গলবার দুপুরেই সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশিত হয় এবং সেই অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে তার মুক্তির আদেশ জারি করা হয়।

এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলায় রিভিউ আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে আপিলে খালাস পাওয়া প্রথম ঘটনা। আইনজীবী মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি যুদ্ধাপরাধ বিচার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মোড়।

উল্লেখ্য, আজহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি ছিলেন এবং অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন।

এই খালাসের পর দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠন এ রায়ের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের শাহবাগ গণআন্দোলনের পটভূমিতে যেসব যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়, আজহারুলের খালাস সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

এদিকে নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এক ফেসবুক পোস্টে এটিএম আজহারের মুক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটিএম আজহারের মুক্তিতে শাহবাগের কণ্ঠে আজ পরাজয়ের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। একাত্তরের প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ চিরদিনের জন্য ধ্বংস করেছে এই শাহবাগই।”

তিনি আরও বলেন, “আশা করি, বিএনপি-জামায়াত তাদের নেতাকর্মীদের রক্তের সাথে বেইমানি না করে শাহবাগ তৈরির সাথে জড়িতদের বিচার করবে একদিন।”

এই রায় যুদ্ধাপরাধ বিচারের ধারাবাহিকতা ও ভবিষ্যত নিয়েও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।