
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে ৫১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম প্রকাশ করেছে ছাত্র-কেন্দ্রিক জোট ‘জুলাই ঐক্য’। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এই তথ্য নিশ্চিত করে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের নামে দমন-পীড়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে জুলাই ঐক্য। এই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার দাবি করেছে তারা।
সংগঠনটির দাবি, ওই সময় সরকার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর পাশাপাশি প্রশাসনের একজন অংশ বিশেষকে ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের উপর গুলি চালানো, গ্রেপ্তার ও হয়রানি চালানো হয়। অনেকে গুরুতর আহত হন, অনেকে আটক হয়ে কারাভোগ করেন। এমনকি বহু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মতো কঠোর ধারায় মামলা দেওয়া হয়।
জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমরা মনে করি, এই ৫১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরাসরি একটি দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন। তারা শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেননি, বরং জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত সহিংস অভিযানের অংশ হয়েছিলেন।”
সংগঠনটি আরও জানায়, এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য, সংবাদ প্রতিবেদন, ভিডিও ফুটেজ ও স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণকারীদের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে। উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় যেন এই ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।
এ বিষয়ে জুলাই ঐক্যের মুখপাত্র বলেন, “এই তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই—রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর প্রশাসনিক বর্বরতার যুগ শেষ। যারা অন্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ গঠিত হয়। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে, এই জোটে যুক্ত হয়েছে ৮০টির বেশি সংগঠন। এটি বর্তমানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এছাড়া, গত ১০ মে দেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। এর ফলে, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা ও নতুন রাজনৈতিক জোটগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং অতীতের ঘটনার বিচার ও দায়বদ্ধতার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা নিচ্ছে।
জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা শুধু নাম প্রকাশেই থেমে থাকবে না—প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন করতে প্রস্তুত রয়েছে।