জামিন না দেওয়ায় বিচারককে গালিগালাজ, আওয়ামী লীগের দালাল বললেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা

প্রতিবেদক নিউজমার্ট ডেস্ক
40 বার দেখা হয়েছে

ঢাকার একটি আদালতে এক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলায় জামিন না দেওয়ায় বিচারকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী। তারা প্রকাশ্যে বিচারককে গালিগালাজ করেন এবং আদালতের কার্যতালিকা ছুড়ে ফেলেন।

শনিবার (১৭ মে) দুপুরে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

জামিন না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

জানা গেছে, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যা চেষ্টা ও চাঁদাবাজির মামলার আসামি হানিফ মেম্বার ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর আবারও জামিনের আবেদন করা হলে শনিবার শুনানির পর বিচারক সেই আবেদনও নাকচ করে দেন।

এরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিচারকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “আইনজীবীরা বিচারককে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে আক্রমণ করেন এবং প্রকাশ্যে কজলিস্ট ছুড়ে মারেন।”

গালিগালাজ ও হুমকি

ঘটনার সময় আদালতের ভেতর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক আইনজীবী বলেন, “আমরা এই কোর্টে রাজনীতি করেছি, ফ্যাসিবাদের দালালদের বিচার করব।” অন্য এক আইনজীবী বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, “আমাদের কারণে আজ আপনি এখানে বসে আছেন। আমরা না থাকলে আপনি এখানে থাকতেন না।”

বিচারক আদালতে বলেন, “আমি জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দিয়েছি। আপনি চাইলে সিজেএম স্যারের কাছে ‘স্পেশাল পুট আপ’ দিয়ে পুনরায় শুনানি চাইতে পারেন।” কিন্তু আইনজীবীরা এতে সম্মত না হয়ে বিচারকের প্রতি হুমকি ও গালিগালাজ অব্যাহত রাখেন।

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে

আদালতের ভেতর এই ঘটনা ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, “ঘটনার তারিখ, সময়, ঘটনাস্থল একই—দুইটা মামলা হয় কীভাবে?” এরপর তিনি আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।

এসময় অন্য একজন আইনজীবী উচ্চস্বরে বলেন, “৫ আগস্ট সরকার ফল্ট করলে আমরা হয়তো গুম হয়ে যেতাম, খুন হতাম।”

হানিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

হানিফ মেম্বার শাক্তা ইউনিয়নের একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি। মামলার বাদী ফজলুল হক জানান, হানিফ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি অভিযোগ করেন, “হানিফ বহু জমি দখল করেছেন, মসজিদের জমিও বিক্রি করেছেন। গ্যাস সংযোগের নাম করে হাজারো মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।”

ফজলুল হক আরও বলেন, “আমি হজে থাকা অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দেওয়া হয়। আমার বাড়ির কেয়ারটেকারকে বেঁধে রেখে হত্যার চেষ্টা করে, স্ত্রীর ওপরও শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয়।”

তিনি আরও জানান, “গত ৫ মে হানিফ ও তার লোকজন আমার বাড়ি ভাঙচুর করে, ১০-১১ লাখ টাকার ক্ষতি করে এবং এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি আইনের আশ্রয় নেই, এরপর থেকে আদালতে গেলে আমাকেও হুমকি দেওয়া হয়।”

মামলার বিবরণ

গত ৬ মে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় ফজলুল হক বাদী হয়ে হানিফ মেম্বারসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, ১৩ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা করে আসামিরা। তার কেয়ারটেকারকে বেঁধে ফেলে এবং স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ

এ ঘটনায় বিচারকের নিরাপত্তা এবং আদালতের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বিচার বিভাগীয় সূত্রগুলো বলছে, বিচারকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন হুমকি-ধামকি ও গালিগালাজ নজিরবিহীন এবং এটি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য হুমকি।

আইনজীবীদের আচরণ নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে বার কাউন্সিল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের দাবি উঠেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন