কমলনগরে আওয়ামী লীগের অনুসারী হারুন বিএনপির পদপ্রার্থী, তীব্র ক্ষোভে স্থানীয় নেতাকর্মীরা

প্রতিবেদক নিউজমার্ট ডেস্ক
23 বার দেখা হয়েছে

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের হাজিরহাট ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপ্রার্থী হয়েছেন হারুনুর রসিদ নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তি, যিনি বিগত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, আবুল কালামের ছেলে হারুনুর রসিদ দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় এমপি ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। এমনকি তিনি সাবেক এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র সুপারিশে কমলনগর উপজেলা খামারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিক দলীয় কর্মসূচি, মিছিল ও সভায় অংশ নিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে।

৫ আগস্ট বর্তমান সরকারের পতনের পর তিনি হঠাৎ করে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম তার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে।

জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, “আমি ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। অথচ হারুনুর রসিদ একজন সুযোগসন্ধানী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন আবার বিএনপিতে এসে পদ পেতে চাচ্ছেন। এটা দলের আদর্শ ও ত্যাগীদের প্রতি চরম অবমাননা।”

তবে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদের জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তবে শেষ সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না। ফলে আমরা বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারিনি।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত প্রার্থী হারুনুর রসিদ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি প্রাণিসম্পদ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, যার কারণে সরকারি কিছু কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগে ভর্তি হয়েছিলাম ঠিকই, তবে ক্লাস করিনি,”—এমন রসিকতা করে তিনি নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।

তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, দলের আদর্শ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্বার্থে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে নেতৃত্ব গঠনের চেষ্টা করা উচিত নয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপি যদি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদীদের প্রাধান্য দেয়, তাহলে দলের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।

স্থানীয়দের মতে, বিএনপির এই সিদ্ধান্তে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা হতাশ ও বঞ্চিত বোধ করছেন। তারা আশা করছেন, এখনও সময় আছে—হারুনের প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনা করে বাতিল করা হলে সংগঠনের প্রতি সাধারণ নেতাকর্মীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং দলের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন