সাঁথিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড়, বদলি না হওয়ায় ক্ষোভ

প্রতিবেদক নিউজমার্ট ডেস্ক
18 বার দেখা হয়েছে

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমতে তিন বছর পরপর কর্মকর্তাদের বদলির বিধান থাকলেও, তিনি অদৃশ্য প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন একই পদে বহাল রয়েছেন। এতে করে স্থানীয় শিক্ষক সমাজের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দায়িত্বে থাকার সময় হেলাল উদ্দিন ভুয়া ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোটরসাইকেলের পেট্রোল বাবদ মাসিক ১ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি ৪২ হাজার টাকা উত্তোলন করেন, যা বরাদ্দের চেয়ে ৩০ হাজার টাকা বেশি। একই বছর নিজের মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার টাকা, অথচ তিনি উত্তোলন করেন ৯ হাজার টাকা। এ ধরনের অনিয়ম ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরেও অব্যাহত ছিল।

এ ছাড়া চরকাবারীখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের জন্য বরাদ্দ পাওয়া টাকা বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে না রেখে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে, কোনো কাজ না করেই একাধিক ভুয়া ক্রয় সংক্রান্ত বিল দেখিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতা বাবদ তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা ভুয়া বিল দেখিয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু অনিয়ম নয়, হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের হয়রানি, বিভাজন সৃষ্টি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও উঠে এসেছে। বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেলাল উদ্দিন নিজের পছন্দের কিছু বই জোরপূর্বক স্কুলগুলোতে বিক্রি করেছেন। যেসব প্রধান শিক্ষক সেই বই নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাদেরকে শোকজ, ভিজিটের নামে হয়রানি কিংবা বদলির ভয় দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে শিক্ষক সমাজে এক ধরনের আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

বিগত সরকার আমলে তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি বলে জানা গেছে। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি নিজেকে জামায়াতের সমর্থক দাবি করে অবস্থান পাল্টেছেন। এতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, “যে কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে শিক্ষাব্যবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছেন, তিনিই আবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন। আমরা তার দ্রুত বদলি ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবীরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। রাজশাহী বিভাগীয় ডেপুটি ডিরেক্টর সানা উল্লাহর সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কিছু শিক্ষক আমার কাছে সুবিধা না পেয়ে এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে। বরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা আমি ব্যক্তিগতভাবে রেখেছিলাম, তবে পরে তা সঠিক খাতে ব্যয় করেছি।”

তবে অনুসন্ধানকারীদের হাতে থাকা বিভিন্ন বিল-ভাউচার ও নথিপত্র এসব অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করে। শিক্ষকরা বলছেন, এই ধরনের কর্মকর্তার কারণে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং শিক্ষক সমাজ এক প্রকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন