তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপ: সন্দিগ্ধ যুবককে খুঁজছে পুলিশ

প্রতিবেদক নিউজমার্ট ডেস্ক
14 বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছোড়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন যুবককে খুঁজছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে এক যুবকের ছবি ছড়িয়েছে, যিনি মাহফুজ আলমের দিকে বোতল ছুড়ে মারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে শনাক্ত করে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।”

ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ করে ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে একটি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারেন। যুবকের মাথায় ছিল একটি ক্যাপ এবং তার আশপাশেই ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের ওই যুবককে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেও দেখা যায়।

তদন্তে মাঠে একাধিক গোয়েন্দা টিম

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, “ঘটনার তদন্তে আমরা গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্তে কাজ চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ইতোমধ্যে তদন্তে নামানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় আমরা কোনো ছাড় দেব না। যেই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঘটনার পটভূমি

বুধবার (১৪ মে) রাতে কাকরাইল মসজিদের সামনে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিসহ চলমান আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলছিলেন। ঠিক সে সময়ই ঘটে এ অপ্রীতিকর ঘটনা।

ভিডিওটি রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই ঘটনাটিকে “উসকানিমূলক” ও “প্ররোচিত সহিংসতা” বলে মন্তব্য করেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, “সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা।”
দলটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা হয়েছে, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এটি কেবল একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বের ওপর আক্রমণ। এ ধরনের আচরণ কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।”

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছে, তারা এ ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নয়। আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল এবং একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে পুরো আন্দোলনকে কলঙ্কিত করা উচিত নয়।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছি। যারা এমন কাজ করেছে, তারা আমাদের আন্দোলনের অংশ না– তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিবেশ উত্তপ্ত করতে চাইছে।”

উল্লেখযোগ্য প্রেক্ষাপট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রধান দাবি হলো:
১. আবাসন সংকট নিরসন
২. পুরোনো ১২টি হল দখলমুক্ত করা
৩. নতুন হল নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ

এই আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন