আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাহিম উদ্দিন বিন আহমেদ এবং তার পরিবারের দুই সদস্যের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে ‘সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, বরং নির্মম হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ)। সংগঠনটি দাবি জানিয়েছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার (৩০ জুন) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নিসআ’র দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম আবু সাঈদ বলেন, “আমরা গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেবল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি দেশের সড়ক ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার নৃশংস প্রমাণ।” তিনি আরও জানান, ফাহিমের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে নিসআ সবসময় নিরাপদ সড়ক ও ন্যায়বিচারের পক্ষে আপসহীন ভূমিকা রাখবে।
নিসআ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা নয়, এটি এক ধরনের কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড, যার দায় ব্যক্তিগত নয়, বরং একটি ভাঙাচোরা, দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং উদাসীন সড়ক ব্যবস্থাপনার। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “যেখানে ট্রাফিক আইন কার্যকর নয়, যানবাহনের লাইসেন্সবিহীন চালকরা রাস্তায় নামে, ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলছে নির্বিঘ্নে—সেখানে প্রতিটি দুর্ঘটনা আসলে পরিকল্পিত হত্যার নামান্তর।”
ফাহিম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উদীয়মান প্রযুক্তি গবেষক। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করে তিনি ইতোমধ্যেই নিজ বিভাগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। তার অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি—এমনটাই মনে করছেন সহপাঠী ও সহশিক্ষকরা।
নিসআ’র পক্ষ থেকে সকল তরুণ ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, এই ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। “এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আদায়ের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা যেতে হবে—সড়কে আর কোনো প্রাণ যাবে না, আইন ভঙ্গকারীরা ছাড় পাবে না।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই #JusticeForFahim হ্যাশট্যাগে হাজারো মানুষ ফাহিম ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছেন এবং বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরাও এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নিসআ বলছে, কেবল প্রাথমিক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এই ঘটনার দায় নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন নির্মম পরিণতির শিকার না হয়।
পরিশেষে, নিসআ পুনরায় জোর দিয়ে বলে, “এই দেশের তরুণরা যেন আর কোনো ফাহিমকে হারাতে না হয়, তার জন্যই আমরা ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপসহীন। আমাদের আন্দোলন চলবে—ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়।”