মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির পরেও থেমে নেই পাল্টাপাল্টি বার্তা। এবার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ঘোষণা দিয়েছে, তারা সাম্প্রতিক সংঘাতে আহত ইরানি নাগরিকদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট ফার্সি ভাষায় এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ প্রকাশ করে সংস্থাটি।
মোসাদের বিতর্কিত প্রস্তাব: আহতদের চিকিৎসায় ডাক্তারি সহায়তা
মোসাদের পোস্টে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এখন স্পষ্ট হচ্ছে এই সংঘাতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পোস্টে আরও বলা হয়,
“ইরানি শাসকগোষ্ঠী এই মুহূর্তে জনগণের সেবা না করে উচ্চশিক্ষার দিকে নজর দিচ্ছে। অথচ সাধারণ নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।”
এ পরিস্থিতিতে মোসাদ ঘোষণা করেছে, তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহায়তায় আহত ইরানিদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে চায়।
ইরানিদের হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তবে এই চিকিৎসা সহায়তা কোন পদ্ধতিতে, কোথায় এবং কাদের মাধ্যমে প্রদান করা হবে—এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একে ‘কৌশলগত বার্তা’ হিসেবেই দেখছেন।
ইরানি সর্বোচ্চ নেতার পাল্টা বার্তা: ‘জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে বিজয়’
মোসাদের ঘোষণার ঠিক কয়েক ঘণ্টার মাথায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুদ্ধবিরতির পর প্রথম বার্তা দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (X) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন:“ভ্রান্ত ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন।”
তিনি এই যুদ্ধকে ইরানের আধ্যাত্মিক ও কৌশলগত বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন, যদিও বাস্তবে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ইরানের পক্ষে বেশ গুরুতর।
১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি: পরমাণু স্থাপনাও রক্ষা পায়নি
ইসরায়েলের টানা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের সামরিক অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- নিহত হয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের IRGC কমান্ডার এবং একাধিক পারমাণবিক বিজ্ঞানী
- পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বড় একটি অংশ বিধ্বস্ত
- বেসামরিক এলাকা ও হাসপাতাল লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়, এতে নারী ও শিশুসহ বহু সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান
- ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আহত ও নিহতদের নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করা হয়নি
অর্থনৈতিক দিক থেকেও যুদ্ধের আগেই নিষেধাজ্ঞায় দুর্বল ইরান আরও সংকটে পড়েছে।
বিশ্লেষণ: মোসাদের চিকিৎসা প্রস্তাব কি মানবিক নাকি রাজনৈতিক চাল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোসাদের এই চিকিৎসা সহায়তা কোনো সাধারণ উদ্যোগ নয়। বরং এটি হতে পারে—
- ইরানি জনগণের আস্থা বিচ্যুতি ঘটানোর প্রচেষ্টা
- বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ও শাসকগোষ্ঠীর মানবিক ব্যর্থতা তুলে ধরার কৌশল
- কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে ‘মানবিক মুখোশে’ উপস্থাপন করার প্রয়াস
অনেকে এটিকে যুদ্ধশেষে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের (Psychological Warfare) একটি নতুন দিক বলেও আখ্যায়িত করছেন।