জাতীয় দিবস তালিকায় তিন নতুন সংযোজন: ‘জুলাই অভ্যুত্থান’, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ও ‘শহীদ আবু সাঈদ’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক পরিপত্রে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়, যা বুধবার (২৫ জুন) রাতে তথ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণীতে তুলে ধরা হয়।

ঘোষিত দিবসগুলো হলো—
১৬ জুলাই: শহীদ আবু সাঈদ দিবস
৫ আগস্ট: জুলাই অভ্যুত্থান দিবস
৮ আগস্ট: নতুন বাংলাদেশ দিবস

৫ আগস্ট: ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ — ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবসের স্বীকৃতি

সরকার প্রতিবছর ৫ আগস্ট দিনটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, এ দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মানে হলো, রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালিত হবে, যা দেশের ইতিহাস ও জনগণের রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

এই দিনে ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে দিবসটি উদযাপন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

৮ আগস্ট: ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ — ভবিষ্যতের স্বপ্নবুননের প্রতীক

অন্যদিকে, ৮ আগস্ট দিনটিকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ দিবসটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এটি মূলত আধুনিক, উদার ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’-কে দেশের ভিশন-২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে একটি অনুপ্রেরণামূলক দিন হিসেবে পালন করা হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৬ জুলাই: ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ — সাহস ও আত্মত্যাগের স্মারক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ জুলাই দিনটিকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষিত করেছে এবং এটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে জাতীয় দিবস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আবু সাঈদ ছিলেন বাংলাদেশের এক মহান মুক্তিযোদ্ধা ও গণতন্ত্রকামী নেতা। তার আত্মত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ করে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবরের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি পরিপত্রে এ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ দিবসটি দেশের তরুণ সমাজকে আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর বার্তা দেবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।

দিবসগুলো পালনে নির্দেশনা ও গুরুত্ব

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, সরকারের এই নতুন ঘোষণা অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে দিবসগুলো যথাযথভাবে পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি, আলোচনা সভা, স্মরণানুষ্ঠান ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে এসব দিবস উদযাপন করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ইতিহাস ও রাজনীতির বাঁকে বাঁকে যে দিবসগুলো ভুলে যাওয়া হয়েছিল, সেগুলোকেই পুনরুজ্জীবিত করে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।