চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন এলাকায় ভয়াবহ এক ঘটনা জনমনে গভীর শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতিকারী চক্রের সংঘবদ্ধ তাণ্ডবে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক “দেশের কথা” পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদ। অভিযোগ, হত্যার উদ্দেশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, ১৯ জুন রাত ৮টার দিকে সংঘটিত এই ঘটনায় সংঘবদ্ধ অপরাধীরা তার বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে বেধড়ক মারধর ও লুটপাট চালায়। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রক্ষা করেনি, বরং জিম্মি করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার মূলহোতা হিসেবে অভিযুক্ত “সোর্স” নামের নুরুল আবছার এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যদিও ১নং আসামি মো. জিহাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলেও, অপরাধীদের বেশিরভাগই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত?
১৭ জুন রাতে জিহাদ ছদ্মবেশে একটি সাবলেট রুম ভাড়া নেয়। অগ্রিম ২০০০ টাকা পরিশোধ করে এবং কিছুদিন পরই ঘটনার সূত্রপাত হয়। তার আগমনের পর থেকেই এলাকায় একের পর এক চুরি, হুমকি ও অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়ির মালিক প্রতিনিধি যখন রুম বাতিল করে টাকা ফেরত দেন, তখন থেকেই জিহাদ ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিতে শুরু করে।
এরপর, ১৯ জুন রাতে সংঘটিত হয় মূল হামলা। প্রতিবেশী সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদ যখন সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করেন, তখনই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত করে। তার মোবাইল, ভিডিও ফুটেজ ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস জোর করে মুছে দেওয়া হয়।
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ?
প্রশাসনের নাকের ডগায় এই ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, একজন আসামি আটক রয়েছে এবং বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। তবে জনমনে প্রশ্ন, কেন এত বড় একটি ঘটনায় এখনো মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে?
ভুক্তভোগীর পরিবার আতঙ্কে
ঘটনার পর থেকে সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদ ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রতিবেশীরাও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে আরো ভয়ঙ্কর পরিণতির হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সারসংক্ষেপে:
- স্থান: বায়েজিদ আ/এ, তায়্যেবা ভবন, চট্টগ্রাম
- তারিখ: ১৯ জুন ২০২৫
- আহত: সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদ
- আসামি: মো. জিহাদ (আটক), নুরুল আবছার (মূল হোতা), সাকিব, পারভেজ সহ ৬-৭ জন
- অভিযোগ: হত্যাচেষ্টা, লুটপাট, হুমকি, ভিডিও মুছে ফেলা, জিম্মি করে রাখা
- পুলিশি পদক্ষেপ: একজন আটক, বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে
এই ঘটনা কি শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন হামলা? নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও সন্ত্রাসের মদদপ্রাপ্ত এক ভয়াবহ বাস্তবতা? প্রশ্ন এখন জনমনে, সাংবাদিকও কি আজ নিরাপদ নন?