ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধের সূচনা’ বলে মন্তব্য করেছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিরা। তারা জানিয়েছে, এই হামলা কোনোভাবেই যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং একটি বড় সংঘাতের সূচনা মাত্র।
রবিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য উঠে আসে। হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-ফারাহ আলজাজিরাকে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা যুদ্ধের শেষ নয়, এটি যুদ্ধের শুরু। ট্রাম্প দ্রুত শত্রুতা শুরু করে যুদ্ধ শেষ করতে চাইলেও বাস্তবতা ভিন্ন।”
তিনি আরও বলেন, “এখন আর সেই সময় নেই যে আপনি দূর থেকে আঘাত করে পালিয়ে যাবেন। প্রতিক্রিয়া আসবে, এবং তা হবে সরাসরি। ইরান একা নয়।”
ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান: পারমাণবিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু
যুক্তরাষ্ট্রের কথিত এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো—যেগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। যদিও এখনো ইরানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি, তবুও মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা যদি সত্য হয়, তাহলে এটি সরাসরি এক ধরণের যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য, কারণ এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের কৌশলগত স্থাপনায় সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ।
হুতিদের অবস্থান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে ইরানপন্থী হিসেবে পরিচিত। তারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফলে এই ঘটনার পর হুতিদের মন্তব্য কেবল একটি দলের অভিমত নয়, বরং একটি আঞ্চলিক প্রতিরোধ বলয়ের প্রতিচ্ছবি।
মোহাম্মদ আল-ফারাহ আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসনকে চুপচাপ মেনে নেব না। যারা মনে করে ইরান একা—তারা ভুল করছে। আমরা প্রস্তুত।”
আঞ্চলিক উত্তেজনার ভবিষ্যৎ কী?
এ ধরনের হামলা শুধু ইরান নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। পারস্য উপসাগর, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেন—সব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও উদ্বেগ
এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ব নেতারা এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে কূটনৈতিক সমাধান চান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে পারমাণবিক সংঘর্ষের আশঙ্কাও তৈরি করতে পারে।
হুতিদের বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়াবহ সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হতে পারে পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা এবার শুধু কথার লড়াই নয়—পরমাণু স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে তা রূপ নিতে পারে সরাসরি যুদ্ধের দিকে।