ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি একে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, এ ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েলের এই সামরিক পদক্ষেপ ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল। ইরানের বেসামরিক, পারমাণবিক এবং জ্বালানি স্থাপনায় এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে।”
উক্ত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়া চরম নিন্দনীয় এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক ক্ষমাহীন অপরাধ। মুখপাত্রের ভাষায়, “ইসরায়েল এখন একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী শক্তিতে পরিণত হয়েছে, যার অপতৎপরতা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, গোটা বিশ্বে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।”
উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, “ওয়াশিংটন ও তার পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষপাতদুষ্ট ও উসকানিমূলক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে একটি অনিয়ন্ত্রিত ও বিপর্যয়কর যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা সহযোগীরা ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করছে। ইসরায়েল এক ক্যান্সার সদৃশ রাষ্ট্র, যা প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করছে।”
এ প্রসঙ্গে উত্তর কোরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, “ইরানের প্রতি আমার ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে।” এ বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ইঙ্গিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে পিয়ংইয়ং। তারা ওয়াশিংটনের প্রতি সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে এবং বড় আকারের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পিয়ংইয়ং-এর মতে, “ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা এক ধরনের রাজনৈতিক দ্বিচারিতা, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভণ্ডামির পরিচায়ক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার এমন বক্তব্য কূটনৈতিকভাবে বার্তা দেওয়ার একটি কৌশল, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প বলয় গঠনের ইঙ্গিতও রয়েছে।