দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসন, জাতিগত নিধন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এই আহ্বান জানান। নেতৃদ্বয় বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ১৩ জুন (শুক্রবার) ইসরায়েল ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাগেরি এবং ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন।
এছাড়া, ১৭ জুন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আইআরআইবিতে বোমা হামলা চালানো হয়, যাতে ৩ জন সাংবাদিক নিহত হন। গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে ইরান সরকার জানিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও হামলা চালায়, যা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করছে।
ছাত্রশিবির আরও অভিযোগ করে, ইরানের বিরুদ্ধে এসব হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত এক দশকে ইসরায়েল সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননে হামলা চালিয়ে প্রায় ১১৪০ জনকে হত্যা করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু ২০২৪ সালেই সিরিয়া ও ইরাকে ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান হামলায় ৩৭৮ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে।
ছাত্রশিবির দাবি করে, ১৯৪৭-৪৮ সালের জাতিসংঘ পরিকল্পনার আড়ালে ইসরায়েল ‘নাকবা’ ঘটিয়ে ৫৩১টি গ্রাম ধ্বংস করে এবং ৮ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করে। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ৮৫ শতাংশ ভূমি দখল করেছে ইসরায়েল। শুধু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের ৪৮ শতাংশই নারী ও শিশু।
নেতারা সাম্প্রতিক ‘ফ্লাওয়ার ম্যাসাকার’, হামাস নেতৃবৃন্দের টার্গেট কিলিং, এবং যুদ্ধাপরাধের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বারবার নিন্দা জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ারও সমালোচনা করা হয়।
বিবৃতিতে ওআইসি, আরব লীগসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নীরবতাকে ইসরায়েলের প্রতি মৌন সম্মতি আখ্যা দিয়ে নেতারা বলেন, এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সংকট তৈরি করতে পারে।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মুসলিম বিশ্বের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।