রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা: লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগেই—অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে—বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তিনি এই সম্ভাবনার কথা জানান। বৈঠক-পরবর্তী যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন গতি তৈরি করবে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে এটি হতে পারে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, যা গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে।

তারেক রহমানের প্রস্তাব

বৈঠকে তারেক রহমান প্রস্তাব করেন, ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, “রমজান শুরুর আগে নির্বাচন হলে তা সময়োপযোগী হবে। দেশের জনগণও এটাই চায়।”

তারেক রহমান আরও জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন, এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে তা জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক শান্তির পথে এক বড় পদক্ষেপ হবে।

প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানান, নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচন হোক, তবে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে নির্বাচন করতে হলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে।”

শর্ত দুটি হলো:

  1. নির্বাচনের যাবতীয় কারিগরি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া।
  2. সংবিধান ও নির্বাচনী কাঠামো সংশ্লিষ্ট সংস্কার এবং বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন।

তিনি বলেন, এই দুটি শর্ত পূরণ হলেই রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ও জনগণের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এই উদ্যোগ রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথ খুলে দেবে। আমরা চাই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক, যেখানে জনগণের মতামতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”

তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপি সব সময় গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণের বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই বৈঠক এবং নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে আলোচনাই প্রমাণ করে যে একটি সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে রমজানের মতো একটি সংবেদনশীল সময়ের আগেই নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করছেন অনেকে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বৈঠকে উভয় পক্ষই আগামী সপ্তাহগুলোতে একটি সর্বদলীয় রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। সেই আলোচনায় নির্বাচনের রূপরেখা, পর্যবেক্ষক নিয়োগ, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্র জানায়, “আমরা চাই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রস্তুতি একসাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনার মাঝে এই খবর একটি আশার আলো হয়ে এসেছে। রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা এবং প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির মধ্যে সরাসরি আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ এখন চায় একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন—যার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে।