ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (IRGC) কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। সিএনএন ও একাধিক ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গতকাল গভীর রাতে ইসরায়েল ‘নেশন অব লায়ন্স’ নামক একটি সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। টাইমস অব ইসরায়েলকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান থেকে আসা তাৎক্ষণিক হুমকির প্রেক্ষিতে এই আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও নূর নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় তেহরানে অবস্থিত বিপ্লবী গার্ড সদর দপ্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়া ও আগুনের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে প্রেস টিভি জানিয়েছে, হামলায় “অনেক হতাহত” হয়েছে, তবে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। নিহতদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী থাকতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানান, “এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক অবকাঠামো। যতক্ষণ না আমাদের মিশন সম্পূর্ণ হয়, ততক্ষণ অভিযান অব্যাহত থাকবে।” একই সঙ্গে তিনি দেশজুড়ে ‘বিশেষ জরুরি অবস্থা’ জারির ঘোষণা দিয়েছেন। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইরানের পক্ষ থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ আশপাশের এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে সব ফ্লাইট।
যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার সঙ্গে নিজেদের কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয়। আমাদের অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত এলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেনারেল হোসেইন সালামির মৃত্যুর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়তে পারে। তিনি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠজন এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের অন্যতম কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সামরিক অবস্থান আরও কঠোর ও সক্রিয় হয়েছিল।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ কয়েকদিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, “পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং যুদ্ধ শুরু হলে আমাদের লক্ষ্য হবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।”
বিশ্বজুড়ে এই হামলার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে এবং উভয় পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা যে এখন সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে, তা বলাই যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এই পরিস্থিতি যেন আরও বিস্তৃত যুদ্ধের রূপ না নেয়।