খালেদা জিয়ার পরামর্শে লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক: জাতীয় নির্বাচনে নতুন মোড়?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সক্রিয় পরামর্শেই বদলে যাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই সম্ভাব্য সাক্ষাৎকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক সমঝোতার আশা দেখা দিয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে নির্বাচন নিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা কমলেও, বিএনপির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করায় বিতর্ক থামেনি। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সাক্ষাৎ এখন রাজনৈতিক মহলে আগ্রহের কেন্দ্রে।

সরকারি সফরে গতকাল (মঙ্গলবার) চার দিনের জন্য লন্ডনে পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের আগেই বিএনপি ও সরকারি সূত্রে নিশ্চিত করা হয় যে, তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সকালে এই সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই বৈঠক সফল হলে নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার পরিকল্পনা ও ‘জুলাই সনদ’সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব অনেকটাই কমে আসতে পারে। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের সিদ্ধান্ত গত মে মাসের শুরুতেই চূড়ান্ত হয়। এরপর থেকেই বিএনপি এই সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে।

সম্প্রতি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ না পড়ানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা বিএনপি ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কে নতুন করে তিক্ততা সৃষ্টি করে। এই প্রেক্ষাপটে গত ২৮ মে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে তারেক রহমান ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান। এপ্রিল মাসে নির্বাচন নিয়ে ঘোষণার পরও বিএনপি সন্তুষ্ট না হওয়ায় ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সম্ভাব্য সাক্ষাৎ কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়।

তবে শেষ পর্যন্ত এই সাক্ষাৎ বাস্তবায়নে বেগম খালেদা জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। বিএনপি সূত্র জানায়, উভয় পক্ষের আগ্রহ ও সরকারের বাড়তি উদ্যোগে সাক্ষাতের সময় চূড়ান্ত হয়। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। আর তারেক রহমান দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের সাক্ষাৎ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি না হলে সমালোচকরা নেতিবাচক বার্তা ছড়ানোর সুযোগ পেত।”

এই বৈঠক নিয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “এই সাক্ষাৎকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, জাতীয় নির্বাচন ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।”

এদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল ড. ইউনূসের ঘোষিত সম্ভাব্য নির্বাচনের সময়কে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে জাতির মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে, ১৩ জুনের সম্ভাব্য বৈঠক শুধু দুই নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং এটি দেশের আগামী রাজনৈতিক পথে গতি আনতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো