জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে ঘোষণাযোগ্য ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর হওয়ার আগেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে তা হবে অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক। তাঁর মতে, এতে চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন অন্তত আরও দুই মাস সময় নেয় এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করে। জনগণ সেই সনদে ভবিষ্যতের শাসনব্যবস্থা, ক্ষমতার ভারসাম্য, এবং নির্বাচনসংক্রান্ত মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জানতে পারবে। এরপরেই নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “আমরা ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। গত ১০ মাসেও আমরা সংলাপ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে অগ্রগতি দেখেছি। সুতরাং, আর মাত্র দুই মাস সময় নিয়ে একটি সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক রূপরেখা সামনে আনলেই জাতীয় নির্বাচন অধিকতর অর্থবহ ও স্বচ্ছ হতে পারে।”
বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নাহিদ ইসলাম জানান, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। তাদের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী আইন কাঠামোর পূর্ণ সংস্কার এবং কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি আমরা জানিয়েছি।”
এদিনের বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে তিনটি মূল দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি:
- সরকার ঘোষিত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের অগ্রগতি কী—তা জানতে চাওয়া;
- নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই জুলাই সনদ কার্যকর করার দাবি;
- নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী আইনের কাঠামো সংস্কার করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি।
নাহিদ বলেন, “এর আগে জানুয়ারিতে সরকার একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল, পরে আন্দোলনের চাপে নতুন প্রতিশ্রুতি আসে। এবার যেন আর কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না হয়। আমরা চাই, অংশীজনদের সাক্ষ্য ও মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হোক।”
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক সমঝোতার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত অংশগ্রহণ জরুরি।