কুলাউড়ার দত্তগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দত্তগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে প্রদীপ বৈদ্য (২৩) নামে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নিহত প্রদীপ বৈদ্য শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রামের বাসিন্দা শৈলন্দ্র বৈদ্যের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।

শনিবার (৩১ মে) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলার ইরানি থানার রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮৫২ নম্বর পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের বড় ভাই জয়ন্ত বৈদ্য জানান, “গতকাল বিকেল ৫টার দিকে প্রদীপ বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত হয়ে গেলেও সে বাড়ি ফেরেনি। পরে আমরা ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে যাই, কিন্তু তারা বলেন—এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। পরবর্তীতে বিশেষ সূত্রে আমরা জানতে পারি, আমার ভাইকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে এবং বর্তমানে তার মরদেহ ভারতের কৈলাসহর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।”

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জয়নুল ইসলাম বলেন, “বিএসএফের গুলিতে আমাদের এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের যুবক নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। নিহত প্রদীপ একজন নিরীহ দিনমজুর ছিলেন। আমরা নিহতের বড় ভাইকে নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে এসেছি এবং বিষয়টি বিজিবি ক্যাম্পকে জানিয়েছি।”

বিজিবির দত্তগ্রাম ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মো. মখলিছুর রহমান বলেন, “আমরা এখনো অফিসিয়ালি কোনো তথ্য পাইনি। বিএসএফের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। নিহতের পরিবার শনিবার রাত থেকেই ছেলেটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

এদিকে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, “আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। তবে এখন পর্যন্ত বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা পাইনি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ ঘটনায় সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক হতাহত হচ্ছেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক তদন্ত বা বিচারের কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না।

এদিকে নিহতের পরিবার দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। তারা বলেন, “আমাদের ভাইয়ের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠুভাবে দাফন করা যায়, সেই ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।”