জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে আদালতের বিচার কার্যক্রম।
রোববার (১ জুন) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র উপস্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ অভিযোগে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা, নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলি, নারী নির্যাতন, এবং পরিকল্পিতভাবে নিরীহ জনতার উপর হামলার মূল নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এর আগে, ১২ মে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি বিশদ তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার নাম গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উঠে আসে। সেই প্রতিবেদনই আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে, গত ২০ মে ট্রাইব্যুনাল–১ এর বিচারকক্ষে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি স্থাপন সম্পন্ন হয়। এর ফলে আদালতের অনুমতিক্রমে বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার বা রেকর্ড করে প্রচারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য কোর্টরুম ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ট্রায়ালের যেকোনো পর্ব আদালতের অনুমতিক্রমে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হতে পারবে।”
আইনজীবী ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সরাসরি সম্প্রচার বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গণমান্যতা বৃদ্ধি করবে। তারা বলেন, “বিচারপ্রক্রিয়া জনসমক্ষে উন্মুক্ত হওয়ায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে রায় ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। তারা এই বিচারকে “গণআন্দোলনের ন্যায়বিচার” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার, কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন এবং তা সরাসরি সম্প্রচারের ঘটনা ঘটলো, যা বিচার বিভাগের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।