কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি: ঈদের আগের সাত দিনে সুন্নত আমল ও করণীয়

মুসলিম উম্মাহর অন্যতম পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এই ঈদ শুধু আনন্দের উৎসব নয়, এটি তাকওয়া, ত্যাগ ও ইখলাসের মহান শিক্ষাকে ধারণ করে। ইসলামে কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতের বহিঃপ্রকাশ। ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বিশেষ গুরুত্ববহ, বিশেষ করে ৩ থেকে ৯ জিলহজ—এই সাত দিন কিছু আমল রয়েছে যা পালন করা সুন্নত।

১. নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম না কাটা (যারা কোরবানি করবেন)

যারা কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করেছেন, তাদের জন্য সুন্নত হলো—জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম না কাটা। এটি নবী করিম (সা.)-এর একটি নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে। ইমাম মুসলিমের হাদীসে এসেছে, “তোমাদের কেউ যদি কোরবানি দিতে চায়, তবে যেন চাঁদ দেখার পর নখ ও চুল না কাটে।” (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭)

২. কোরবানির পশু কেনার প্রস্তুতি

সুন্নত কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু নির্বাচন জরুরি। কোরবানির পশু:

  • সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে (গরু/মহিষ ২ বছর, ছাগল/ভেড়া ১ বছর)
  • কোনো শারীরিক ত্রুটি থাকা যাবে না (যেমন—অন্ধ, পঙ্গু, অতিমাত্রায় রোগাক্রান্ত)
  • কেনাকাটায় ধোঁকা ও মিথ্যা থেকে বিরত থাকা চাই

৩. কোরবানির নিয়ত ও উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ করা

কোরবানির অন্যতম মূল শিক্ষা হলো—ইখলাস, অর্থাৎ কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করা। লোক দেখানো বা সামাজিক সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে তা ইবাদত হিসেবে গৃহীত হয় না। কোরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহর কাছে পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ: ৩৭)

৪. ঈদের নামাজের আগে কোরবানি না করা

হাদীসে এসেছে, “যে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করল, সে কেবল মাংস খাওয়ার জন্য কোরবানি করল।” (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং ঈদের নামাজ শেষে কোরবানি করা সুন্নত ও শর্তসাপেক্ষ।

৫. পশুর যত্ন ও সেবা

কোরবানির পশুকে স্নেহ ও যত্নের সঙ্গে পালন করা উচিত। ইসলাম পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পশুকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা, খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা দেওয়া এবং অতিরিক্ত শব্দ বা ঘণ্টি থেকে বিরত রাখা উত্তম।

৬. কোরবানিতে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি (যৌথ কোরবানি)

যৌথ কোরবানির ক্ষেত্রে শরিকদের পবিত্র উদ্দেশ্য ও হালাল উপার্জনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। শরিক হওয়ার আগেই অংশীদার নির্বাচন করে প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম।

৭. ঈদের দিন দান ও বণ্টনের পরিকল্পনা

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব—এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের জন্য, এবং এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের জন্য। এটি কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং ইবাদতের অংশ।