জাপানি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে চায় বাংলাদেশ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিশ্ববাজারে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে জাপানি ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে, জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণরা শুধু বিদেশে কর্মসংস্থানই নয়, বরং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগও পাবেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, “যারা জাপানি ভাষায় পারদর্শী, বিশেষ করে যারা লেভেল ফোর পর্যন্ত উত্তীর্ণ হতে পারবে, তাদের জন্য জাপানে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি এখন আর শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে।”

তিনি জানান, এই উদ্যোগকে সফল করতে বড় পরিসরে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ তরুণ-তরুণীকে জাপানি ভাষা শেখানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। “আমরা প্রথমে ২০০ থেকে ৫০০ জন দিয়ে শুরু করব। এরপর ধাপে ধাপে সংখ্যাটি বাড়িয়ে হাজারে এবং পরে লাখে নিয়ে যাওয়া হবে,” বলেন ড. ইউনূস।

ভাষা শিক্ষার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষক সংগ্রহের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। “আমরা দেশে শিক্ষক তৈরি করব, প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও আনা হবে। ভাষা শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নেব,” বলেন তিনি।

ড. ইউনূস এই উদ্যোগকে শুধু ভাষা শিক্ষা হিসেবে না দেখে একে তরুণদের জন্য একটি বৈশ্বিক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের সুযোগ হিসেবেই মূল্যায়ন করেন। তার মতে, “যখন একজন তরুণ জাপানি ভাষায় দক্ষ হয়ে বিদেশে কাজ করতে যাবে, সে কেবল একজন কর্মী নয়, সে এক ধরনের দূত হয়ে উঠবে। সেখানে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে সে ফিরে এসে দেশেও নতুন উদ্যোগ নিতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে আমরা বহুদূর যেতে পারবো। এটা কেবল শুরু, একবার শুরু হলে আর থামবে না।”

ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুনভাবে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারবে। “ভাষা জানার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ তৈরি হবে, তা অনেক তরুণের জীবন বদলে দেবে। যারা সফল হবে, তারা ফিরে এসে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারে বাংলাদেশের তরুণদের অংশগ্রহণের জন্য এই ধরনের উদ্যোগ সময়োপযোগী। তবে কার্যকর বাস্তবায়ন, মানসম্মত প্রশিক্ষণ এবং সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই উদ্যোগের সফলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।