
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো আইসিসির সহযোগী দেশের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারের পর ২০২৫ সালের ঠিক একই দিনে আরব আমিরাতের বিপক্ষেও একই পরিণতি বরণ করতে হলো টাইগারদের। দুই বছরেই ২১ মে তারিখে হারের এই কাকতালীয়তা বাংলাদেশের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ স্মৃতি।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর তৃতীয় ম্যাচে পুরোপুরি ব্যর্থতায় ডুবে যায় লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দল। ব্যাটিং-বোলিং কোনো বিভাগেই লড়াই করার মতো পারফরম্যান্স দেখা যায়নি। ফলাফল—বাংলাদেশ হারল ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এর মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল আরব আমিরাত।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং সহযোগী দেশের কাছে হারের ইতিহাসে এখন বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে শীর্ষে। পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা সহযোগী দেশের বিপক্ষে ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরেছে। যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার মাত্র ৪টি। ইংল্যান্ড ৩টি, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা ২টি করে ম্যাচ হেরেছে।
শুধু ম্যাচেই নয়, সিরিজ বিবেচনায়ও বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষে। স্কটল্যান্ড (২০১২), যুক্তরাষ্ট্র (২০২৪) এবং আরব আমিরাতের (২০২৫) কাছে হেরে টাইগাররা এখন পর্যন্ত ৩টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল সহযোগী দলের বিপক্ষে। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ের পরে বাংলাদেশই একমাত্র দল যারা একাধিক সিরিজ হার দেখেছে সহযোগীদের বিপক্ষে।
২০১২ সালে স্কটল্যান্ড সফরে গিয়ে এক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের এই অবনমনের যাত্রা। এরপর দীর্ঘ বিরতি শেষে গত এক বছরে দুটি সিরিজ হারের মাধ্যমে সেই ব্যর্থতা আরও গভীর হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিসিবি’র পরিকল্পনা ও পরিচালনাতেও। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে যে প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে খেলা হয়েছিল এই সিরিজ, সেটাই এখন হয়ে উঠেছে আত্মবিশ্বাস ভেঙে ফেলার কারণ।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাটিং অর্ডারের অস্থিরতা, অধিনায়কত্বের স্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার সংকট—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে এক কঠিন সংকটে পড়েছে।
সমর্থকদের হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যে এই সিরিজ হার বাংলাদেশ ক্রিকেটে আরও একটি লজ্জাজনক অধ্যায় যোগ করল, যা শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি কঠিন সতর্কবার্তা।