সরকার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সোমবার (১৯ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি সরকারের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
রাষ্ট্রীয় সহায়তায় খুনিদের পলায়ন?
হাসনাত অভিযোগ করেন, “একজন খুনিকে, যিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাকে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দেশ ছাড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তাকে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে। অথচ এমন গুরুতর অপরাধের বিচার নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে একজন অভিযুক্ত খুনি সরকারের সহযোগিতায় দেশত্যাগ করেন এবং কেন এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। তার মতে, এটি শুধু বিচারহীনতার সংস্কৃতি নয়, বরং সরকারের পরিকল্পিত নীতির অংশ।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অভিযোগ
ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাসনাত আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। “মে মাস পার হয়ে যাচ্ছে, এখনও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। কেন এই দেরি? কার স্বার্থে এই বিলম্ব?” — এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, “ইন্টারিম হিসেবে ৬২৬ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকা আজ কোথায়? তারা কি সবাই নিরাপদে দেশ ছেড়ে চলে গেছে?” তার মতে, এসব অপরাধীদের রক্ষায় সরকারের নীতিগত অবস্থান রয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছে।
নুসরাত ফারিয়া হত্যাকাণ্ড এবং ‘মনোযোগ ডাইভারশন’ তত্ত্ব
হাসনাত ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক আলোচিত হত্যাকাণ্ড নুসরাত ফারিয়ার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সরকার জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে তারা বিচারে কঠোর। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হলো বড় অপরাধ থেকে দৃষ্টি সরানো।
তার ভাষায়, “এগুলো কোনো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন। বড় অপরাধ আড়াল করতে সরকার ছোট ইস্যুতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জনগণের মত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।”
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার ব্যবস্থার ব্যবহার
হাসনাতের অভিযোগ, বিচার ব্যবস্থাকে সরকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। “সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়, যেন আসল অপরাধীরা ধরা না পড়ে এবং আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের দায়মুক্ত দেখাতে পারে।”
তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু রেখে অপরাধীদের রক্ষা করছে এবং দেশে আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই শীর্ষ নেতার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার অভিযোগ সরকারের বিচার ব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সরকারি কোনো পক্ষ থেকে এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব ইস্যু সামনে রেখে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়তে পারে।