জামায়াতের নারী নেতাদের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাক্ষাৎ: নীতিগত বিষয় ও নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা

প্রতিবেদক নিউজমার্ট ডেস্ক
31 বার দেখা হয়েছে

ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক জামায়াতে ইসলামীর নারী শাখার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক অর্থবহ সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার (১৯ মে) ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক জামায়াতে ইসলামীর নারী শাখার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আলোচনায় দলটির নারী সদস্যদের ব্যস্ততা এবং নীতিগত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।”

এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দলগুলো এবং তাদের নারীনেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের এই পদক্ষেপ তাদের অংশগ্রহণকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।

সূত্র জানায়, সাক্ষাতে জামায়াতের নারী শাখার নেতারা নারী অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারীর উন্নয়ন সম্ভব এবং জামায়াতে ইসলামীর নারী শাখা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন সময় তিনি দেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এবার জামায়াতের নারী নেতাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও নজরকাড়া।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ হাইকমিশনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশে নারী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর নারী শাখা অনেক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় শিক্ষা, সমাজসেবা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও তাদের কার্যক্রম রাজনৈতিকভাবে অনেক সময় বিতর্কিতও হয়েছে, তবে দলের পক্ষ থেকে নারীর উন্নয়ন ও সমাজে ইতিবাচক ভূমিকার দাবি বরাবরই করা হয়ে থাকে।

সাক্ষাতে অংশ নেওয়া এক নেত্রী বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের নারী সমাজ ইসলামী মূল্যবোধ বজায় রেখে সমাজের প্রতিটি স্তরে নেতৃত্বে এগিয়ে আসুক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কথোপকথন সেই প্রচেষ্টারই অংশ।”

তবে এই সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ব্রিটিশ কূটনীতির এক সচেতন পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে জামায়াতকে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবেও ব্যাখ্যা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “যে দলের রাজনৈতিক অবস্থান ও অতীত ভূমিকা নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্ক আছে, সেই দলের নেতাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের এমন সাক্ষাৎ বার্তা বহন করে। এতে দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও জামায়াতের নারী নেতাদের এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংলাপের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এটি কেবল একটি সাক্ষাৎ নয়, বরং তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন