চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণ এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্প্রতি এক প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে, যেখানে শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গঠনের উদ্দেশ্যে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির শাখার উদ্যোগে উত্থাপিত এই দাবিগুলো শিক্ষার্থী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্রথম দাবিতে বলা হয়েছে, শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং যতদিন পর্যন্ত তা সম্ভব না হবে, ততদিন অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত হারে আবাসন ভাতা প্রদান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আবাসন সংকট দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত একটি ইস্যু, যা শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ছাত্রশিবির মনে করে, এই দাবির বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থাকে আরও সুদৃঢ় করবে।
দ্বিতীয় দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অনলাইনভিত্তিক লেসনডেল নির্ধারণ এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছে। এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং পাঠদান কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসবে বলেও দাবিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তৃতীয় দফা দাবিতে, পর্যাপ্ত ও নিরাপদ যানবাহন সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শহর থেকে দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়া, চতুর্থ দফায় অভ্যন্তরীণ রুটে চাকা নির্বাচন ও নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যাতে যাত্রীসেবায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
পঞ্চম দাবি অনুযায়ী, দ্রুত সময়ে মধ্যে টিএসসি কমপ্লেক্স, স্টুডেন্ট অডিটোরিয়াম নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদের পুনঃনির্মাণ এবং আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।
ষষ্ঠ দাবিতে উল্লেখ করা হয়, জুম্মার খুৎবা ও ক্যাম্পাসে ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। এই কমিটি নিয়মিত ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চা ও ক্যাম্পাসে নৈতিক পরিবেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মীয় অনুভূতির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সপ্তম দফায় বলা হয়, বিভিন্ন ফ্যাসিলিটি পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের কার্যক্রমের মূল্যায়নের ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তন করতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং দুর্নীতি, অনিয়ম বা অবহেলা হ্রাস পায়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই দাবিগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলোকে সম্মান জানিয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এই সাত দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি নিরাপদ, উন্নত ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ছাত্রশিবিরের এই দাবিগুলোকে সময়োপযোগী এবং যৌক্তিক বলে মনে করেন। অনেকে বলছেন, রাজনীতি বা মতাদর্শ নির্বিশেষে এসব দাবি বাস্তবায়ন হলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দাবিগুলোর প্রতিক্রিয়ায় এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এই দাবিগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নিউজমার্ট ২৪- কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত | ইমেইলঃ press.newsmart24@gmail.com
স্বত্ব ©২০২৫ newsmart24