ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। শনিবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার (১৮ মে) তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
গাজার মিডিয়া অফিস জানায়, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরও একটি ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর গাজা গভর্নরেটেই গত দুই দিনে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টতই গণহত্যারই অংশ।” তারা আরও উল্লেখ করে, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বসতবাড়ি, অবকাঠামো, অ্যাম্বুলেন্স ও মানবিক সহায়তা কাঠামো ধ্বংস করছে। এ পর্যন্ত উত্তর গাজার এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে।
মিডিয়া অফিস অভিযোগ করে জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা প্রায় ১৪০টি মরদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে।
উত্তর গাজার জাবালিয়ার তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও আশপাশের অঞ্চলে শরণার্থীদের জন্য স্থাপিত শত শত তাঁবু ইসরায়েলি ড্রোনের হামলায় পুড়ে গেছে। এতে আরও হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, এই মানবিক বিপর্যয়ের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা ও কিছু দেশের সহযোগিতামূলক ভূমিকা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
গাজা শহরের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। আশ্রয়কেন্দ্রের তীব্র সংকটের কারণে হাজার হাজার পরিবার রাস্তায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে আল-জালাআ স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায় মানবিক পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ কিছুই নেই। বিমান হামলা, আর্টিলারি গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন হামলার মধ্যে আশ্রয়হীন মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
গাজার মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠাতে হবে, অবরোধ তুলে মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় সফরের সময়কালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আনাদোলুর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই সফরকালে ৩৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যেখানে তার আগের চার দিনে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০। অর্থাৎ সফরের সময় হত্যার হার প্রায় চারগুণ বেড়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনৈতিক সমর্থনের আশ্রয়ে ইসরায়েল এ ধরনের আক্রমণ চালিয়ে যেতে পারছে। বিশেষ করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা এই হামলাকে উৎসাহিত করছে বলে তাদের অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এরপর ১৮ মার্চ তারা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে আবারও হামলা শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের মানবতাবাদী শক্তি, সাংবাদিক সমাজ, এবং সচেতন নাগরিকদের একযোগে জোরালো আওয়াজ তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে—এমনটাই মনে করছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিশ্লেষকরা।
নিউজমার্ট ২৪- কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত | ইমেইলঃ press.newsmart24@gmail.com
স্বত্ব ©২০২৫ newsmart24