সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চে পুলিশের বাধা, নগর ভবনে ফিরে গেলেন ইশরাক সমর্থকরা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসি) মেয়র হিসেবে নির্বাচিত ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন তার সমর্থকরা। শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগর ভবনের সামনে থেকে এই লংমার্চ শুরু হয়। তবে সচিবালয়ের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের অগ্রযাত্রা আটকে দেয়। বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের দিকেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।

লংমার্চটি নগর ভবন থেকে শুরু হয়ে গুলিস্তান মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অগ্রসর হয়। কিন্তু সচিবালয়ের কাছাকাছি আসতেই পুলিশ বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়ে ব্যারিকেড বসিয়ে তাদের পথ রোধ করে। সেখানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছুটা ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়নি।

বিক্ষোভকারীদের অনেকেই এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন—‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’। তাদের দাবি, ঢাকাবাসীর ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই বিলম্ব ও টালবাহানার বিরুদ্ধে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নেতা বলেন, “আমরা কোনো সংঘাত চাই না। আমরা ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের রায় বাস্তবায়নের দাবিতে রাজপথে নেমেছি। প্রশাসন বাধা না দিলে আজ সচিবালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিতাম।”

এর আগে, সকাল থেকেই ইশরাক সমর্থকরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। নগর ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমর্থকদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।

সমর্থকরা জানান, এই কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে এবং তাদের দাবির প্রতি সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছাত্র, যুবক, নারীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “নগর ভবন থেকে সচিবালয়ের দিকে যে লংমার্চ শুরু হয়েছিল, সেটি অনুমোদিত ছিল না। জননিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় আমরা ব্যারিকেড দিয়েছি এবং মিছিল থামিয়েছি।”

সচিবালয় এলাকাটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়ায় সেখানে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ, মিছিল বা লংমার্চকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে, ইশরাক হোসেন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ঢাকার জনগণ আমাকে তাদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেছে। এখন আমার শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জনগণের রায়কে অগ্রাহ্য করে, কৌশলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে। জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনে ইশরাক হোসেন বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও নানা জটিলতায় তিনি এখনও শপথ নিতে পারেননি। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ইশরাকের সমর্থকরা গত কয়েকদিন ধরে নগর ভবনের সামনে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান জানানো হয়নি।