জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। একইসঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তা মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (১৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এসব মন্তব্য করেন। তারা বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করে। কিন্তু মৎস্য ভবন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দেয় এবং অতর্কিতে হামলা চালায়।”
এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী, অন্তত ৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন সাংবাদিক আহত হন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “সংবিধানপ্রদত্ত মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে এমন দমনমূলক আচরণ অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মম চিত্রকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করে কোনো সময়ই জনদাবি রোধ করা যায় না।”
ছাত্রশিবির মনে করে, শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসন এবং একটি সহায়ক একাডেমিক পরিবেশ অত্যাবশ্যক। বিবৃতিতে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রধান সমস্যা হলো আবাসন সংকট। দেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর এত বছরেও আবাসনের সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পুরনো ১২টি হল উদ্ধার করতে না পারা, নতুন হল নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতা, পর্যাপ্ত জমি থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের অভাব এই সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে।”
এছাড়া ঢাকায় উচ্চ বাসা ভাড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ পড়ছে, যা তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ছাত্রশিবিরের নেতারা বলেন, “যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। নাগরিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিবাদ করার সুযোগ সংবিধানে স্বীকৃত। ফলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর এমন ন্যক্কারজনক হামলা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।”
তারা অবিলম্বে এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান এবং সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বিবৃতির শেষে ছাত্রশিবির সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি—আবাসন সংকট নিরসন, পুরোনো হলগুলো উদ্ধার, ও নতুন হল নির্মাণ—সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
উল্লেখ্য, চলমান আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট, উচ্চ ভাড়ার চাপ, ও নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২টি পুরোনো হল এখনো দখলমুক্ত হয়নি এবং নতুন হল নির্মাণে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ফলে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ছাত্রশিবিরের বিবৃতিটি দেশের বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি, যারা সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মতপ্রকাশ ও শিক্ষার অধিকারে হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
নিউজমার্ট ২৪- কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত | ইমেইলঃ press.newsmart24@gmail.com
স্বত্ব ©২০২৫ newsmart24