
বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানপন্থা’ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ান মিডিয়া বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘পাকিস্তানপন্থি’ বলে চিহ্নিত করছে। এটি একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা, যা ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে ভিন্নমতকে ‘পাকিস্তানপন্থি’ ট্যাগ দেওয়া মানে ভারতীয় আধিপত্যবাদী ন্যারেটিভকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুনরুজ্জীবিত করা। আমরা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে আবার সেই আত্মঘাতী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে চাই না।”
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ইন্ডিয়ান রেটোরিক ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে দমন ও বিচারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখন সেই একই কৌশল আবারও প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।”
তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেকোনো ভারতীয় প্রভাবিত প্রচারণা বা শব্দচয়নের চর্চা জাতীয় ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং ভারতের আধিপত্যবাদকে সুযোগ করে দিতে পারে। এটি প্রতিহত করতে হবে।”
বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান—সবই ছিল জুলুম ও দখলদারিত্ববিরোধী জনতার লড়াই। এই প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অনিবার্য ভিত্তি। এসব ইতিহাসকে বিকৃত করা নয়, বরং গ্রহণ করে রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনের ভিত্তি বানাতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই দেশের আলেম-ওলামা সবসময়ই অন্যায়, জুলুম ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও তারা সক্রিয় ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।”
হেফাজত ইসলামের এই নেতা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদর্শে পরিচালিত হবে। এখানে ‘পাকিস্তানপন্থা’ বলে কোনো কল্পিত বিভাজনের স্থান নেই।”
শেষে তিনি বলেন, “বাংলাদেশপন্থি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—এই তিনটি ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সম্মান জানিয়ে সব ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে একতাবদ্ধ হতে হবে।”