ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ, জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রত্যয়

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতিমুক্ত একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ (আপ বাংলাদেশ)। শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক আনুষ্ঠানিক আয়োজনে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা, যিনি নিজের বক্তব্যে ক্ষোভ ও বেদনার সঙ্গে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “খুনিদের বিচার নিয়ে সরকার যে আচরণ করছে তা দেখে মনে হচ্ছে সরকার আমাদের সঙ্গে টিটকারি করছে। বিচার না দিয়ে তারা আওয়ামী দোসরদের বিদেশে পালাতে সাহায্য করছে। আমাদের কলিজা ঠান্ডা হবে তখনই, যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে।”

ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আলী আহসান জুনায়েদ, সদস্য সচিব আরিফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়ক রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠন নাইম ইসলাম, এবং মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শাহরিন সুলতানা ইরা

আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “আজকের মঞ্চ শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের মঞ্চ। বাংলাদেশে পিলখানা, শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার সবই এ দেশের ইতিহাসে রক্তে লেখা। সেই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা রাজনীতি করব।” তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে, এবং এখন সময় এসেছে সেই আত্মত্যাগকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।

তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে আমাদের রাজনৈতিক পথচলা হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, আর তা হবে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি— আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে কোনো গড়িমসি চলবে না।”

এ সময় প্ল্যাটফর্মটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের প্রস্তুতির কথাও জানান জুনায়েদ। তিনি বলেন, “জুলাইয়ে আত্মত্যাগকারী পরিবার ও নির্দলীয় মানুষের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গঠন করে আমরা চলতি বছরের মধ্যেই ঘোষণা দেব ‘জুলাইয়ের ইশতেহার’। এ দেশের মানুষ এখন বলছে, ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা।’ অর্থাৎ তারা আর বিদেশী আধিপত্য ও দাসত্ব মেনে নেবে না।”

‘আপ বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংগঠনটি হবে সব মত ও পথের মানুষকে একত্রিত করে একটি গণতান্ত্রিক, সহিষ্ণু ও জনগণের রাষ্ট্র গঠনের প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম মূলত ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মের ভাবনা ও আত্মত্যাগকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যার মূল ভিত্তি হলো জুলাই আন্দোলনের চেতনা।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের তরুণদের নেতৃত্বে যে বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সেই ঐতিহাসিক আন্দোলনের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।