রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ফের রাজনৈতিক উত্তেজনা। শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা মোড় অবরোধ করলে তৈরি হয় এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। ফলে সায়েন্সল্যাব, টিএসসি ও বাংলামোটরের সঙ্গে শাহবাগ সংযোগকারী সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন এবং দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অবস্থান নেন।
সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়কে সমাবেশ শেষে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আহমেদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।
শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হয় জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ ছাত্র-জনতাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। তাদের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ইত্যাদি স্লোগান।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং তারা ‘সাংগঠনিক অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ লিপ্ত। তারা দলটি নিষিদ্ধ করে একটি "গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা" নিশ্চিত করার দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, এই আন্দোলন ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলনের’ ধারাবাহিকতা, যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন দেশের তরুণরা। সেসময় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবারও রাজপথে সরব হয়েছেন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, বিক্ষোভ সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় ঘিরে অনিশ্চয়তা ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিক্ষোভ একটি বড় রাজনৈতিক সঙ্কেত, যা আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মোড় আনতে পারে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলমান শাসন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এই আন্দোলন।
এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিউজমার্ট ২৪- কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত | ইমেইলঃ press.newsmart24@gmail.com
স্বত্ব ©২০২৫ newsmart24