ইতিহাসের পাতায় বালাকোটের যুদ্ধ এক গৌরবময় এবং একই সাথে মর্মান্তিক অধ্যায়। নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে যখন সাইয়েদ আহমদ শহীদ ইংরেজ-শাসিত ‘দারুল ইসলাম ভারত’ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখনই বিরুদ্ধ পক্ষ—শিখ শাসক রণজিৎ সিংহ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। অর্থলোভ ও ধূর্ততা ছিল তার মূল হাতিয়ার। সীমান্তের উপজাতীয় পাঠানদের তিনি প্রলুব্ধ করেন অর্থের মাধ্যমে, যাতে তারা সাইয়েদ আহমদের সংগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এই অবস্থায় দ্বিমুখী ষড়যন্ত্রে পড়ে মুজাহিদ বাহিনী। একদিকে পাঠানদের মধ্যে কুসংস্কারগ্রস্ততা, অন্যদিকে তাদের অর্থলোভ—উভয়ই ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধ শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। সাইয়েদ আহমদের কুসংস্কারবিরোধী ও সংস্কারমুখী অবস্থান অনেক উপজাতীয়ের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ও আপোষহীনতা, যদিও ন্যায়ের পক্ষে ছিল, তবুও অনেকেই তা সহ্য করতে পারেনি। অথচ এটিই ছিল সাইয়েদ আহমদের প্রকৃত শক্তি—তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।
শুধু শত্রুর ষড়যন্ত্রই নয়, নিজের দলের ভিতর থেকেও বিশ্বাসঘাতকতা আসে। সেই বিশ্বাসঘাতক খুবি খাঁর হাত ধরেই বালাকোটের প্রান্তরে সংঘটিত হয় সেই মর্মান্তিক যুদ্ধ, যেখানে শাহাদাত বরণ করেন দুই মহান নেতৃ—সাইয়েদ আহমদ বেরলভী ও মাওলানা শাহ ইসমাইল দেহলভী।
এই ইতিহাস আমাদের শেখায়, একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা শুধু বাইরের শত্রু নয়, বরং অভ্যন্তরীণ ভাঙন ও বিশ্বাসঘাতকতা। আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা, সত্যের পথে দৃঢ় থাকা, অন্যায়ের সাথে আপোষ না করার শিক্ষাই রেখে গেছেন এই শহীদরা।
আজ, যখন সমাজ আবারও বিভ্রান্তির দোলাচলে—সত্যকে আড়াল করে প্রলোভনের সামনে আত্মসমর্পণের প্রবণতা দেখা যায়—তখন ইতিহাসের এই অধ্যায় স্মরণ আমাদের নতুন করে চেতনা জোগায়। বালাকোট শুধু একটি যুদ্ধের নাম নয়, এটি সত্য ও ত্যাগের এক অবিনাশী প্রতীক।
নিউজমার্ট ২৪- কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত | ইমেইলঃ press.newsmart24@gmail.com
স্বত্ব ©২০২৫ newsmart24